বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্রিশালেই হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। স্থান চুড়ান্ত করে জায়গা দেখার পর মাটিও পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে কি অদৃশ্য কারণে তা আর হলনা। ময়মনসিংহবাসী অনেক আশা করে বারবার আন্দোলন সংগ্রাম করেও বিমানবন্দর পেল না।

ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়া বাংলাদেশের সব বিভাগেই একাধিক করে বিমানবন্দর রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমানে ১৭টি বিমানবন্দর রয়েছে, যেগুলো ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়া সারাদেশেই রয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগ ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী লোকসংখ্যার দিক থেকে ৬ নম্বরে অবস্থান। ময়মনসিংহের বিভাগ দেশের সবচেয়ে অবহেলিত অঞ্চল বলেই এ এলাকার মানুষ মনে করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালেই স্থাপন করার জোর দাবী উঠেছে। বর্তমানে ময়মনসিংহে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ও আলোচিত বিষয় এটি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিমানবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে, এসব অঞ্চলের মধ্যে ময়মনসিংহের ত্রিশালকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখেছিলেন বিমানবন্দর স্থাপনের সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক টিম।

আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে প্রায় নিশ্চিত আভাস পাওয়া গিয়েছিল ত্রিশালেই বিমানবন্দর হচ্ছে। স্থাপনের স্থানও পরিদর্শন করেছিল পর্যবেক্ষক টিম। জায়গা খুঁজতে খুঁজতে পার হয়ে গেছে এক দশক।

মানুষ তখন না বুঝেই বিরোধিতা করেছে। এখন ওই স্থানীয়রাই বিমানবন্দরের জন্য জায়গা দিতে মিছিল-সমাবেশ করছে। স্থানীয় প্রশাসন সে সময় জনগণকে সঠিকভাবে তুলে ধরলে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ এ বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি এতদিন ঝুলে থাকত না। জানা গেছে, এ বিমানবন্দর নির্মাণে প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ময়মনসিংহের ত্রিশালে।

ত্রিশালেই বিমানবন্দর হচ্ছে এ সংবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর আকস্মিক ভাবে ফুঁসে উঠে ত্রিশালের আঞ্চলিক একটি চক্র। তারা ত্রিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোটিপতিদের কাছে প্রজেক্ট করার লক্ষ্যে জমি বেচা কেনা করে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছিল। ঐ চক্রটির ধারনা ছিল ত্রিশালে বিমানবন্দর হলে এলাকার জমির একটা বিশাল অংশ বিমানবন্দর স্থাপনে চলে যাবে। ফলে তারা জমি বেচা-কেনা খাতে ঘাটতির সম্মুখীন হতে হবে। আঞ্চলিক এ চক্রটি যুক্তিতে বেছে নেয় ভিন্ন পথ। ঐ সময় বিমানবন্দর স্থাপনের সম্ভাবনাময় স্থান চেলেরঘাট এলাকার নারী পুরুষদের কুমন্ত্র দিতে থাকে ঐ চক্র। বোঝানো হয়েছিল এখানে বিমানবন্দর স্থাপিত হলে, সাধারণ মানুষের শত শত বাড়ি ঘর উচ্ছেদ করে দেয়া হবে। এ যুক্তিতে ফুঁসে উঠেছিল এলাকার কিছু অতি লোভী ও তোষামোদী মানুষ।

অতঃপর এসব এলাকার লোকজন দিয়ে বিমানবন্দর স্থাপনের বিপক্ষে নানা কর্মসূচী করানো হয়েছিল। তখন ¤øান হয়ে যায় বিমানবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা। বোকারাম হিসেবে সমালোচিত হতে থাকে ত্রিশালের মানুষ। বিভিন্ন স্থানে ধিক্কার জানায় সচেতন মানুষজন। এসব গøানি ও দুর্নামে যখন ত্রিশালের আকাশ ভারি হতে থাকে তখন আন্দোলনরত ত্রিশালের মুষ্ঠিমেয় বোকা মানুষ তাদের ভূল বুঝতে শুরু করে। এ বাস্তবতায় গা ঢাকা দেয় চক্রান্তকারী লোভী চক্র।

ত্রিশালের সচেতন বিবেকবানদের ধারণা, এখানে বিমানবন্দর স্থাপন হলে ত্রিশালের মানুষ হাজার বছর এগিয়ে যাবে। এদিকে ত্রিশালের চেলের ঘাট এলাকায় বিমানবন্দর স্থাপনে কিছু উপযুক্ত কারণ এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা যেতে পারে। চেলের ঘাট এলাকার রায়মনি, কোরাগাছা, বাদামিয়া, খাগাটি গ্রাম এবং মোক্ষপুর ও মঠবাড়ী ইউনিয়নের কিছু অংশসহ হাজার হাজার একর জমি এক ফসলি, জলাবদ্ধতা সম্পন্ন অফলজ বৃক্ষ বেষ্টিত অকেজো বনজ ভূমি। বিভিন্ন প্রজাতির সারহীন কাচা গাছ পালা। যা দিয়ে কোন প্রকার আসবাবপত্র তৈরী করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে সহজ বিষয় হচ্ছে সরকার চেলের ঘাট এলাকার সেনাঘাটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১২ শত একর জমি ক্রয় করেছিল। এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমান খাস জমি।

ময়মনসিংহ একটি উদীয়মান শিল্পোন্নত বিভাগ। এছাড়া ময়মনসিংহ হলো ৮ম বিভাগীয় শহর। কাজেই ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করলে দেখা যায় এ বিকাশমান রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক চাহিদা-সড়ক, নৌ এবং রেলপথের মাধ্যমে চালানো সম্ভবপর হবে না। যানজট এর কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়বে। তাই ত্রিশালে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন খুবই জরুরী। কারণ ময়মনসিংহের বিকাশমান অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আজ না হউক কাল বিমানবন্দর করতেই হবে।

বহুল প্রত্যাশিত ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের কাজ দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-অর্থনীতি, কৃষিসহ সব দিক থেকে এগিয়ে ত্রিশাল। ফোরলেন মহাসড়ক হওয়ার পর নতুন শিল্পোদ্যোক্তারাও এখানে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালু করতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা জরুরি বলে মনে করছেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।

বিদেশি ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও রপ্তানিকারকেরাও ত্রিশাল হয়ে অষ্টম বিভাগ ময়মনসিংহে আসতে চান। বিদেশি ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা এলে ত্রিশাল আরো অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপান্তরিত হবে। ময়মনসিংহে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষানগরী হিসেবে খ্যাত ময়মনসিংহে হাজার হাজার বিদেশি ও পর্যটক ত্রিশাল হয়ে ময়মনসিংহ আসেন।

জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালে কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দর্শনীয় ও ধর্মীয় একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। ছোট-বড় অনেক শিল্প-কারখানা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালুর মতো সব ধরনের অনুক‚ূল পরিবেশ ত্রিশালে বিদ্যমান।

বিশ্বে বাংলাদেশকে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের হাব হিসেবে গড়ে তোলাসহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকার আশপাশে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের সরকারের। ত্রিশালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনে ত্রিশালবাসী ঐক্যবদ্ধ আছেন।

ত্রিশালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্ভাবনার দুয়ার আরও বিস্তৃত হবে। খুলে যাবে এখানে যোগাযোগ, পরিবেশ, পাইপলাইনে গ্যাসসহ নানা কারণে শিল্পের অনুক‚ল পরিবেশ বিরাজমান আছে। শুধু বিমান যোগাযোগ সুবিধা না থাকায় বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবিসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষও ত্রিশালে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করে জোরালোভাবে একত্রিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি, যতদ্রæত সম্ভব ত্রিশালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন করা হোক।

ত্রিশালে বিমানবন্দর স্থাপন হলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাও বাড়বে আরও অনেক।

ময়মনসিংহ ও ত্রিশালের মানুষের এখন সময়ের দাবী ঢাকার অদুরবর্তী স্থান ত্রিশালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন করা হোক। 

তাই ত্রিশালের মুক্ত আকাশে কবে নাগাদ উড়ন্ত বিমান অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমাবে এমনটাই স্বপ্নের কথা জানালেন এ প্রতিবেদকের কাছে ত্রিশালের অনেক সাধারন মানুষ।

কাজেই সবদিক বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ময়মনসিংহ বিভাগবাসীর আবেদন পূর্বের প্রস্তাবিত ময়মনসিংহের ত্রিশালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন করা হোক।