স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠেনি কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিটি পরিবারে শিক্ষিত বেকার লোকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অর্থনেতিকভাবে জামালপুর জেলার সব চেয়ে অবহেলিত অবস্থায় আছে বকশীগঞ্জ উপজেলা।

জানা যায়, জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার আয়তন ২৩৮.৩০ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮২ সালে ৩০ এপ্রিল ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে বকশীগঞ্জ থানায় উন্নিত হয়। ১৬ মাস ১৪ দিন পর ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টম্বর বকশীগঞ্জ থানা উপজেলায় উন্নিত হয়। ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বকশীগঞ্জ ইউনিয়ন হিসেবে দেওয়ানগঞ্জ থানার অধীনে ছিলো।

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ি বকশীগঞ্জ উপজেলায় লোক সংখ্যা ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৩০ জন। ইউনিয়ন থেকে থানা ও থানা থেকে উপজেলায় উন্নিত করেছেন জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ -বকশীগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি সাবেক মন্ত্রী এম এ সাত্তার।

জামালপুর জেলার সর্ব কনিষ্ট উপজেলা বকশীগঞ্জ। আয়তনের দিক দিয়ে জামালপুর জেলার ৬ নম্বর অবস্থানে বকশীগঞ্জ উপজেলা। বকশীগঞ্জ উপজেলার আযতন ২৩৮ দশমিক ৩০ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে জামালপুর জেলার সব চেয়ে ছোট উপজেলা মাদারগঞ্জ। মাদারগঞ্জ উপজেলার আয়তন ২২৫ দশমিক ৩৯ বর্গ কিলোমিটার।

১৯৭৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিগত ৪৮ বছরে জাতীয় সংসদের ১১টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫জন ব্যক্তি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন (১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ সাল) ১ বার, আলমাস হোসেন (১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সাল) ১ বার, এম এ সাত্তার (১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮) ২ বার। ১৯৯৬ সালে ব্যারিস্টার মাইনুল হক (১৯৯৬ এর ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯৬ এর জুন পর্যন্ত) ১ বার। ২০০১ সালে এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত (২০০১ থেকে ২০০৮) ১ বার। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ।

আবুল কালাম আজাদ স্বাধীনতার পর এ আসন থেকে ৫ বার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতার পর বিগত ৪৮ বছরে আলমাস হোসেন ৫ বছর, ব্যারিস্টার মাইনুল হোসেন ৫ মাস, এম এ সাত্তার ৩ বছর ও এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ৫ বছরসহ মোট ১৩ বছর ৫ মাস স্বতন্ত্র, জাপা ও বিএনপির প্রার্থী নিবাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জাতীয় সংসদের এ আসনে ৩৪ বছর ৭ মাস জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি। তাই জাতীয় সংসদের এ আসনটি আওয়ামী লীগের আসন হিসেবেই পরিচিত।

১৯৭১ এর ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের প্রাণ কেন্দ্র ছিলো বকশীগঞ্জ। বাংলাদেশের সর্ব প্রথম পাক হানাদার বাহিনি সামরিক কায়দায় আত্ম সমর্পণ করেছেন বকশীগঞ্জ উপজেলায়। এর পরেই সর্ব প্রথম স্বাধীন হয়েছে বকশীগঞ্জের মাটি। যুদ্ধ কালিন বাংলাদেশের ১১টি সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর ছিলো ১১ নং সেক্টের। ১১নং সেক্টরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র ছিলো বকশীগঞ্জ। এ কারণে ১১নং সেক্টরের ৩ জন সেক্টর কমান্ডার পর্যাক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জামালপুর জেলায় খেতাপ প্রাপ্ত মক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১১ জন। এর মধ্যে বকশীগঞ্জ উপজেলায় খেতাপ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৩ জন। অন্য ৬টি উপজেলায় মোট খেতাপ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ৮ জন। জামালপুর জেলা এবং ১১ নং সেক্টরের সিংহভাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বকশীগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রিক। শত শত শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পবিত্র রক্তেভেজা বকশীগঞ্জ উপজেলার মাটি। বকশীগঞ্জ উপজেলার প্রতি ইঞ্চি মাটিতেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাস।

বকশীগঞ্জ ছাড়া জামালপুর জেলার অন্য ৬টি উপজেলায় সরকারিভাবে একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কর্মমুখি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যার ফলে পাল্টে গেছে অন্য ৬টি উপজেলার অর্থনৈতিক চিত্র। জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তর সারকারখানা যমুনা ফার্টিলাইজার। যমুনা ফার্টিলাইজার ছাড়াও সরকারি জুট মিল রয়েছে সরিষাড়ি উপজেলায়। এ কারণে সরিষাবাড়ি উপজেলায় বেকারত্বের হার খুবই কম। হাজার হাজার মানুষ সারকারখানা ও জুটমিলকে কেন্দ্র করে আয়ের উৎস খোজেঁ পেয়েছেন।

সদর উপজেলায় শিল্প নগরীসহ নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ফলে সদর উপজেলায় হাজার হাজার বেকার মানুষের হাত কর্মের হাতে পরিনত হয়েছে।

মেলান্দহ উপজেলায় আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় ও সাইনো প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি কর্মমুখি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এ কারনে মেলান্দহের হাজার মানুষের কর্মস্থান হয়েছে। ব্যবসার প্ররিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। আয় বেড়েছে সাধারণ মানুষের।

মাদারগঞ্জ উপজেলায় নৌবন্দর, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি সোলার প্যানেল ও প্রস্তাবিত সেনা নিবাস প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে হাজার হাজার বেকার মানুষ কর্ম খোজেঁ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ভবিষৎও উজ্জল হয়ে উঠছে।

ইসলামপুর উপজেলায় সরকারিভাবে প্যারামেডিকেল প্রতিষ্ঠা হওয়ায় অনেক বেকার মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় স্বাধীনতার আগেই প্রতিষ্ঠা হয়েছে জিল বাংরা সুগার মিল। জিলা বাংলা সুগার মিলে যোগ্যাতানুযায়ি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু বিগত ৫০ বছরেও বকশীগঞ্জ উপজেলায় কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। কর্মসংস্থানমুখি কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। অথচ বকশীগঞ্জ উপলোয় রয়েছে বিশাল গারোপাহাড়। সৌন্দর্যের লীলা ভুমি হিসেবে পরিচিত বকশীগঞ্জ গারো পাহাড়।

সম্ভাবনাময় গারোপাহাড়কে ঘিরে পর্যটন উপজেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে বকশীগঞ্জ উপজেলা। ফলে এক দিকে দেশে বিদেশে বকশীগঞ্জ উপজেলার পরিচিতির বিকাশ ঘটবে। অন্য দিকে এই এলাকার মানুষের আয় ও ব্যবসার প্রসার ঘটবে। বিশাল গারোপাহাড়কে কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে দুগ্ধ খামার।

সম্ভাবনাময় বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়াকামালপুর স্থল বন্দরের কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলে আন্তরজাতিকভাবে বকশীগঞ্জ উপজেলার গ্রহণ যোগ্যতা বহুগুনে বৃদ্ধি হওযার সম্ভাবনা রয়েছে। এই স্থল বন্দর পূর্নাঙ্গস্থল বন্দররে রুপ নিলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কয়েক হাজার ব্যবসায়ী লাভবান হবে। স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও আয় বৃদ্ধি পাবে।

বকশীগঞ্জ উপজেলায় যথেষ্ট পরিমান খাস জমি ও পাহাড়ি জমি রয়েছে। তাই বকশীগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ, গারোপাহাড়, প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষি সম্পদ, স্থল বন্দর, পর্যটন কেন্দ, নকঁশী কাঁথা, বেনারশি পল্লী ও বাশঁ শিল্প নিয়ে গড়ে উঠতে পারে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চল কিন্তু তা হয়নি।